বিয়ে করা: সুন্নাত ওয়াজিব নাকি ফরজ?
বিবাহ একটি দ্বৈত ব্যক্তিগত ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা, যা সমাজের এবং ধর্মের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মুল্যবান। বিবাহ বিষয়টি যখন আসে, একটি মন্নায়নপূর্ণ বিষয়ও এবং প্রশ্নগুলি উত্থাপন করে, যেগুলি একজন মানুষকে ব্যক্তিগত এবং ধার্মিক দৃষ্টিতে চিন্তা করতে বাধা দেয়। এই চিন্তা মধ্যে, বিয়ে করার সঠিক পথ নির্ধারণ করতে সুন্নাত ওয়াজিব এবং ফরজ এই দুটি প্রত্যাশিত শব্দ আসে।
বিয়ে করা সুন্নাত ওয়াজিব নাকি ফরজ এ নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মধ্যে মতভেদ আছে। কিছু স্কলার মনে করেন যে বিয়ে করা সুন্নাত, অন্যরা মনে করেন যে এটি ওয়াজিব, আবার কেউ কেউ মনে করেন যে এটি ফরজ।
যারা মনে করেন যে বিয়ে করা সুন্নাত, তারা মনে করেন যে এটি একটি ভাল কাজ, কিন্তু এটি করা বা না করা উভয়ই জায়েজ। তারা মনে করেন যে বিয়ে করা মানুষের জন্য একটি সুখকর এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করে।
যারা মনে করেন যে বিয়ে করা ওয়াজিব, তারা মনে করেন যে এটি একটি ফরজের কাছাকাছি একটি কাজ। তারা মনে করেন যে বিয়ে করা মানুষের জন্য একটি দায়িত্ব, এবং এটি না করলে তাদের পাপ হবে।
যারা মনে করেন যে বিয়ে করা ফরজ, তারা মনে করেন যে এটি একটি ফরজ কাজ। তারা মনে করেন যে বিয়ে করা মানুষের জন্য একটি আবশ্যিক কাজ, এবং এটি না করলে তাদের কেয়ামতের দিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
বিয়ে করা সুন্নাত, ওয়াজিব নাকি ফরজ তা নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। ব্যক্তি নিজের অবস্থান এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে সে বিয়ে করবে কিনা।
কুরআনে বলা হয়েছে, "আর তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রী-গণ সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাকারীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।" (সূরা রুম:২১)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, "আর তোমরা তোমাদের মধ্যে থেকে যারা অবিবাহিত এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদের বিয়ে দাও, যদি তারা দরিদ্র হয় তবে আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" (সূরা নুর, আয়াত ৩২)
আল্লাহ তায়ালা বিয়েকে একটি পছন্দের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি এটিকে একটি ভাল কাজ এবং একটি সুখকর জীবনযাপন করতে সাহায্যকারী একটি উপায় হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বিয়েকে একটি দায়িত্ব হিসেবেও উল্লেখ করেছেন, এবং তিনি এটি না করলে মানুষের পাপ হবে বলেও উল্লেখ করেছেন।
এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি বিবাহ করল, সে ইসলামের অর্ধেক পূর্ণ করল। সুতরাং সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে সতর্ক থাকে।" (তিরমিযী)
অন্য হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।" (আবু দাউদ)
এ থেকে বোঝা যায় যে, বিয়ে করা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে, বিয়ে করা ফরজ নয়। বিয়ে করা সুন্নাত। সুতরাং, কেউ যদি বিয়ে করতে চায় না, তাহলে সে বিয়ে করতে বাধ্য নয়।
বিয়ে করার ফযিলতসমূহ:
* বিয়ে মানুষকে শান্তি দেয়।
* বিয়ে মানুষকে প্রেম ও দয়া প্রদান করে।
* বিয়ে মানুষকে সন্তান দান করে।
* বিয়ে মানুষকে সামাজিক মর্যাদা দেয়।
* বিয়ে মানুষকে দায়িত্বশীল করে তোলে।
* বিয়ে মানুষকে সৎ ও চরিত্রবান করে তোলে।
বিয়ে করার শর্তসমূহ:
* বিয়ের পক্ষ উভয়ের সম্মতি থাকা।
* বিয়ের পক্ষ উভয়ের বয়স ১৮ বছরের বেশি হওয়া।
* বিয়ের পক্ষ উভয়ের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া।
* বিয়ের পক্ষ উভয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা।
বিয়ে করার নিয়মসমূহ:
* বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া।
* বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করা।
* মোহর নির্ধারণ করা।
* নিকাহ অনুষ্ঠান করা।
* বরযাত্রী পাঠানো।
* বউ সাজানো।
* বউকে ঘরে আনা।
* বউকে সংবর্ধনা জানানো।
বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। এটি একটি পবিত্র বন্ধন। বিয়ে মানুষকে সুখী ও সমৃদ্ধ করে তোলে।